শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরসেনসাস ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিট্টু খালাশির বড় ছেলে ট্রলার চালক নুর মোহাম্মদ খালাশি (৩০) এর রহস্যজনক মৃত্যুতে পরিবার এবং এলাকাবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,মৃত নুর মোহাম্মদ খালাশি চরসেনসাস ইউনিয়নের টেকপাড় বাজারের ডেকোরেটর ও ট্রলার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বেপারীর ট্রলারে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছিলেন।০১ আগস্ট রবিবার সকালে জাহাঙ্গীর বেপারীর ট্রলারে ১৭ থেকে ১৮ জন লোক নিয়ে মোবারক পাঠানের ছেলের শশুর বাড়ির একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গোসাইরহাট উপজেলার চর জালালপুর যান নুর মোহাম্মদ খালাশী।রাত্রে বাড়ি ফেরেন লাশ হয়ে।
১১ আগস্ট বুধবার এ নিয়ে মৃত নুর মোহাম্মদ খালাশির পিতা ছিট্টু খালাশি বাদি হয়ে ওয়ালিদ মাদবর(৩৫) পিতাঃইদ্রিস আলী মাদবর।শহিদুল্লা মোল্লা(৪৫) পিতাঃমৃত সোবহান মোল্লা।শুক্কুর আলী মালত(৪৮) পিতাঃমৃত জোনাব আলী মালত।তাওহিদ মাদবর(৩২) পিতাঃইদ্রিস আলী মাদবর।নাজমুল হাওলাদার(৩২) পিতাঃনুরুজ্জামান হাওলাদার।মানিক মাঝি (৩৫) পিতাঃছাত্তার মাঝি।দিদারুল সিকদার (৩৮) পিতাঃদুদু মিয়া সিকদার।ইব্রাহীম হাওলাদার(৩৬) পিতাঃনুরুজ্জামাল হাওলাদার।শুক্কুর পাঠান(৩০) পিতাঃমোবারক পাঠান
নাসির সারদার পিতাঃমৃত রশিদ সরদার সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জন কে আসামি করে শরীয়তপুর কোর্টে ৩০২/১০৯/৫০৬(২)/৩৪ ধারায় একটি পিটিশন দাখিল করেন।
এবিষয়ে মৃত নুর মোহাম্মদ খালাশির মা রাশিদা বেগম (৬০) সাংবাদিকদের বলেন,০১ আগস্ট রবিবার আমার বাজানে বালা শইল লয়া বারাইল, আমার বাজানের কোন অসুক বিসুক ছিলনা। কিন্তু হন্ধা বেলাতে আমাগো কাছে ফন আহে যে,আমার বাজানে নাহি মইরা গেছে। ওরা আমার বাজানেরা মাইরা হালাইছে। আর আমাগো কাছে কয় অয় বলে স্টক করে মরছে। ইদ্রিস মাদবরের পোলা ওয়ালিদ আমাগোতনে সাদা কাগজে টিপসই নেয় আর কয় তোমরা যদি সাদা কাগজে সই না দেও তাইলে তোমার পোলারে মাডি দিতে পারবা না। তোমরাতো সামবাদিক তোমাগোরে কই আমার বাবারে মনে হয় কেউ মাইরা হালাইছে।আমার বাবায় কেমনে মরছে আমি হেয়া জানতে চাই?
নিহত নূর মোহাম্মদের ৯ বছরের ছেলে খোরশেদ বলেন, আমার বাবারে ওরা মাইরা হালাইছে। তাই আমার বাবা কেমনে মরছে, কিভাবে মরছে আমি হেয়া জানতে চাই! এই বলে অবুঝ শিশু খোরশেদ কান্নায় ভেঙে পরেন।
কথিত যুবলীগ নেতা ওয়ালিদ মাদবর সাংবাদিকদের বলেন,আমরা একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ট্রলার ভাড়া করি। আসার সময় আমাদের ট্রলারে মাটি আটকে বেশ কয়েক বার ট্রলার বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ওরা ট্রলার হতে নেমে ধাক্কা দিয়ে চলতে সহায়তা করে। কিন্তু এক পর্যায়ে ট্রলারের পাখা ভেঙ্গে যায়। তারপর ঐ ভেঙ্গে যাওয়া পাখা ঠিক করতে নূর মোহাম্মদ যাবার সময় পরে গিয়ে অচেতন হলে, আমরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু ডাক্তার বলেন, ইনিতো মারা গেছেন। পরে আমি লাশ নিয়ে এসে দাফনের ব্যবস্থা করি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনি নিহত নূর মোহাম্মদের মা, বউ,বাবা ও ভাইয়ের কাছ থেকে সাদা কাগজে টিপসই নিয়েছেন কেন? ওয়ালিদ মাদবর উত্তর দিলেন, আমার নিরাপত্তার জন্য। ট্রলারে এতো মানুষ থাকতে আপনা কে কেন সন্দেহ করবে? ওয়ালিদ মাদবর বলেন,আমি রাজনীতি করি সুতরাং আমার শত্রু থাকাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আমি কোনকিছুকে ভয় পাইনা।
চরসেনসাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিতু বেপারি বলেন, আমাকে ঘটনাটি প্রথমে জানানো হয়নি। লাশ দাফন করার পরে আমার ইউপি সদস্য শাক্কু বালার কাছে বিষয়টি জানতে পারি। সাদা কাগজে টিপসই এবং লাশ সুরতহাল করার কথা বললে তিনি জানান, কোন ব্যাক্তির নিকট হতে সাদা কাগজে টিপসই এবং সাক্ষর নেয়া সম্পুর্ন আইনবিরোধী কাজ। তাছাড়া পরিবার যদি লাশ সুরতহাল করতে না চায় সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত আবেদন করতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসক অনুমতি দিলে তারপর লাশ সুরতহাল ছাড়া দাফন করতে পারবেন। সুতরাং এটা যদি কেউ করে থাকে তাহলে সে এটা অন্যায় করছে।
এবিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, মৃত্যুর বিষয়ে আমরা এখনো কোনো অভিযোগ পাই নি এবং কেউ আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেও নি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্তা গ্রহণ করা হবে।