এম বি কাজী নাসির,শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা খাদ্যগুদামে সরকারি ধান, চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।
এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে খাবার অযোগ্য নিম্ন মানের পচাঁ ও পোকাযুক্ত চাল সংগ্রহ করে গুদামজাত করা, নিয়মবর্হিভূতভাবে অন্য জেলা থেকে চাল সংগ্রহ করা এবং যে সকল মিলে বয়লার ও চিমনি নেই, সেসব হাস্কিং মিল মালিকদের কাছ থেকে নিম্ন মানের চাল সংগ্রহ করা, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে কালোবাজারী চক্রের কাছ থেকে ধান ক্রয় করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এছাড়াও সরকার নির্ধারিত পরিমাণ ধান, চাল ও গম সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডামুড্যা উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জুন মাস থেকে ধান ও মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল ক্রয় কর্মসূচি শুরু হয়েছে। জুন মাস থেকে ১৬ আগস্ট পযর্ন্ত বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে ৯ আগস্ট পযর্ন্ত ডামুড্যা খাদ্যগুদামে ৩৬১ মে. টন ধানের বিপরীতে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৯২ মে. টন এবং ৮শ’ মে. টন চালের বিপরীতে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১শ’ ২৫ মে. টন চাল। এছাড়াও ১শ’ ৮ মে. টন গম সংগ্রহ করার কথা থাকলেও ১ কেজি গমও সংগ্রহ করতে পারেনি ডামুড্যা খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ডামুড্যা উপজেলায় ধান-চালের মিল রয়েছে ৮টি। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উল্লেখিত কয়েকটি চালকলে কোন বয়লার ও চিমনি নেই। কোন কোনটিতে প্রধান বয়লার পরিদর্শকের প্রদত্ত কোন সনদপত্র নেই, কোন কোনটার নেই লাইসেন্স নবায়ন। মিলগুলোতে কোন কোনটার শর্তানুয়ায়ী গুদাম নেই। খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহকৃত খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহরযুক্ত বস্তাও পাওয়া যায়নি কিছু কিছু চালকলে। অথচ আভ্যন্তরিণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা-২০১৭ এবং চাল সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণ আদেশ-২০০৮ এর নীতিমালায় সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, সরকারি চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে মিলিং লাইসেন্স ও ফুড গ্রেইন লাইসেন্সধারী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সম্পন্ন সচল মিল চুক্তিযোগ্য হবে। সেখানে উল্লেখ আছে, যেসকল মিলে বয়লার ও চিমনি নেই, সেসব হাস্কিং মিলের সাথে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করা যাবে না এবং মিল মালিকদের প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত সনদ থাকতে হবে।
কিন্তু নিয়মবর্হিভূতভাবে, এসব মিল থেকে চাল সংগ্রহ করছেন ডামুড্যা উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ বুলবুল হাসান। তারপরও সরকার নির্ধারিত ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ।
কৃষকরা জানান, সরকারি মূল্যের সঙ্গে বাজারে ধানের মূল্য কিছুটা বেশি। এছাড়াও গুদামে কৃষকরা ধান নিয়ে গেলে পদে পদে হয়রানি, কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার ও নানা শর্ত পূরণ করতে হয়। তাই বাজারে ধান বিক্রি করতেই তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
আনোয়ার হোসেন সরদার নামে এক কৃষক জানান, দূরের গ্রাম থেকে ডামুড্যা খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে গেলে গাড়ি ভাড়া, সময় ও শ্রম ব্যয় করেও যদি শর্ত পূরণ করা না যায়, তবে ধান নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসতে হয়। এতে কৃষকরা হয়রানি ও আর্থিক দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ডামুড্যা উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ বুলবুল হাসান অসুস্থতার অজুহাতে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের বিষয়ে তার কোন কর্মতৎপরতা ছিল না। নি¤œমানের পচাঁ ও পোকাযুক্ত চাল সংগ্রহের কথা অস্বীকার করে ডামুড্যা উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ বুলবুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, বাইরের বাজারের চেয়ে সরকারি দাম কিছুটা কম যাওয়ার কারণে কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কৃষকরা সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান ও চাল না দিয়ে বেশি দর পেয়ে বাজারে বিক্রি করছেন।
এম এইচ/আর আর এন