আগের দিনের তুলনায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্ত দুটোই বেড়েছে। গতকাল সোমবার সকাল আটটা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৩ দিনের মধ্যে এটি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে সর্বশেষ এক দিনে এর চেয়ে বেশি ৫৬ জনের মৃত্যুর তথ্য ছিল গত ৯ মে।
এর আগে গতকাল সোমবার করোনাভাইরাসে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৭১০ জনের।
দেশে এ পর্যন্ত মোট করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২ হাজার ৩০৫ জন, মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৬৬০ জনের। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৪২ হাজার ১৫১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ১৫ জনের। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ১১, রাজশাহী বিভাগে ৬, খুলনা বিভাগে ৪, বরিশাল বিভাগে ২ এবং সিলেট বিভাগে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ১৮৭ জনের, যা দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর ৫৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ২৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা অন্তত দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।
এ বছরের মার্চ থেকে করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়। মার্চের প্রথমার্ধেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের ওপরে চলে যায়। বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৬ মার্চের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের মৃত্যু খবর দেওয়া হয়, সেখানে ১৯ এপ্রিলের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ওই দিনই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল। এই বিধিনিষেধে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এর মধ্যে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ‘লকডাউন’ ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা ও যাতায়াতে বিপুল লোকসমাগম দেখে জনস্বাস্থ্যবিদেরা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা করেছিল, ঈদের পর সংক্রমণ আবার বেড়ে যাবে। এখনো সেভাবে সংক্রমণ না বাড়লেও ঈদের পর থেকে ঊর্ধ্বগতি প্রবণতা রয়েছে। এদিকে ভারত সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রুত বাড়ছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এখনই সতর্ক হয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।