৫৪ নেতাকর্মীর মুক্তি চান নুর’রা, সুপ্রিম কোর্টের ফটকে অবস্থান

সোমবার (৩১ মে) দুপুরে শাহবাগে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকবৃন্দ’র ব্যানারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ মিছিল ও তার পরবর্তী সময়ে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে আয়োজিত হয় ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৫ শে মার্চ আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ ছাত্র যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদ। বিক্ষোভ কর্মসূচি ও পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হয় সংগঠনটির মোট ৫৪  নেতাকর্মী।
সমাবেশে ছাত্র যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা অবিলম্বে এই ৫৪ নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বিশিষ্টজন ।

বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আটককৃত ৫৪ জন শিক্ষার্থীই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে দুটি জালিম সরকার আছে। একটি হলো- নেতানিয়াহুর ইসরায়েল, অন্যটি নরেন্দ্র মোদির ভারত । তাই যখন নরেন্দ্র মোদি (বাংলাদেশে) এসেছে তখন ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ন্যায্য কাজ করেছে। আটক ৫৪ জনসহ ছাত্ররাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারাই উন্নত ভবিষ্যৎ দেখাতে পারে। নিজের স্বার্থেই আমি তাদের আন্দোলনে আসি।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটি জালিম সরকার। মানবতার প্রতি তাদের কোনো কর্ণপাত নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। দেশে সব চলে কিন্তু তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে আজকের এই সমাবেশে অনেক শিক্ষার্থী থাকতো। তাদের স্লোগানে সরকারের গদি কেঁপে যেত। তাই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। আমাদের সব দাবি সরকারের কানে জোর করে ঢুকিয়ে দিতে হবে। যাতে মাথার যন্ত্রণায় তারা দাবি মানতে বাধ্য হয়।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, ‘সরকার পতনের বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া আমাদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারবো না। চলেন সবাই একসাথে রাজপথে নামি।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো রাজনৈতিক দল না। যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা ছাত্র। আপনারা যারা রাজনৈতিক দল করেন আপনাদের এই ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ। ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে আমরা আগামীতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। সরকার এই ৫৪ শিক্ষার্থীদের যতদিন মুক্তি না দেবে ততদিন আমরা রাজপথে থাকবো।’

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) বলেন, ‘আমরা এখন তারুণ্যকে নিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখার আন্দোলন করছি। ৭১ সালেও আমরা এজন্য যুদ্ধ করেছি।’

ছাত্র যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে আপনারা দৌঁড়াবেন, আমি হাঁটবো, আপনারা সামনে যাবেন, আমি পাশে থাকবো, পেছনে থাকবো না। সরকারকে অনুরোধ, ৫৪ শিক্ষার্থীদের জামিন দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আমরা কারও দয়া মায়া চাচ্ছি না। আইনকে তার গতিতে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘মোদির বিরোধিতা করার পরিপূর্ণ অধিকার এ দেশের জনগণের আছে। এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ সরকার আলেম ওলামা ছাত্রদের ওপর নির্যাতন করছেন। বাংলার মানুষ আপনাদের ছাড়বে না। একদিন তারাই আপনাদের গলায় গামছা বেঁধে গদি থেকে নামাবে। সেদিনের অপেক্ষায় থাকুন।’

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান ,লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান,রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য রাখাল রাহা ।

অভিভাবক সমাজের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন গত ২৫ মার্চ মোদিবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর শাপলা চত্বর থেকে গ্রেফতার হওয়া ইসমাইল হোসেনের মা জাহানার ইমাম। গ্রেফতার হওয়া জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিলুজ্জামান এর বাবা ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ফটোকে আসেন  তারা, প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দিতে সুপ্রিম কোর্টে আসেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ছাত্র অধিকার যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সেখানে গেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিও।প্রথমে তাদেরকে ঢুকতে বাধা দিলেও পরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।