ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার (২৬ জুন) এ তথ্য জানায় নীলফামারীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বর্তমানে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিকেল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার ভোররাতের পর থেকে তা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৪০ মিলিলিটার। টানা দুই দিনের বৃষ্টির ফলে তিস্তাসহ জেলার সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে আমন ধানের বীজতলার পাশাপাশি বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে বিভিন্ন পুকুরের মাছ বের হওয়ার ফলে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তার চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। তিস্তার বন্যায় বসতঘরে পানি ঢুকছে। চরাঞ্চলে ১০ হাজার পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে গেছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।
ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, তিস্তার বন্যায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছচাঁপানী, ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারীসহ ১০ ইউনিয়নের তিস্তা অববাহিকার ১৫টি চর ও গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই সকল এলাকায় বসবাসকারীদের নিরপদে উঁচু স্থানে সরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের বাদাম ক্ষেত ও আমন ধানের বীজতলা হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে রয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার অধিকাংশ নিচু এলাকায় বন্যা দেয়া দিয়েছে।
যমুনার পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
একদিন স্থিতিশীল থাকার পর যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ফের বাড়তে শুরু করেছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি।
শুক্রবার (২৬ জুন) দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিরাজগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সরকার বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে ১২ দশমিক ৯০ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপৎসীমার (১৩ দশমিক ৩৫) ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ সেন্টিমিটার। এর আগে গত ২৪ জুন স্থিতিশীল থাকার পর ২৫ জুন তিন সেন্টিমিটার বেড়ে যায় যমুনার পানি। আজ ফের দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
রণজিৎ কুমার সরকার বলেন, আগামী আরও কয়েকদিন যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে যমুনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ইছামতি ও বড়াল নদীতেও পানি বাড়ছে। নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে ভুট্টা, বাদাম, তিল, কাউন ও সবজি খেত তলিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে এসব ফসল।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধি ও টানা বৃষ্টিতে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোর এক হাজার ৫৯ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি ছুঁয়েছে বিপৎসীমা
অবিরাম বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁয়েছে। আর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
শুক্রবার (২৬ জুন) সকাল ৯টায় ধরলার পানি বিপৎসীমা ছুঁয়েছে (২৬.৫০ সেন্টিমিটার) এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার (২৩.৭০ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রায় দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার নিমজ্জিত হয়েছে ফসল ও গ্রামীণ সড়ক। ইতোমধ্যে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে পাট, ভুট্টা, সবজি খেত, বীজতলাসহ তিল, আউশ ধান ও কাউনের খেত।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ধরলার পানি বিপৎসীমা ছুঁয়েছে। পানি যে হারে বাড়ছে তাতে দুপুরে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুড়িগ্রামের শহর রক্ষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কার করায় এবার ধরলার পানি শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নদী ভাঙনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। কিছু কিছু ভাঙন কবলিত এলাকায় আমরা জরুরিভিত্তিতে কাজ অব্যাহত রেখেছি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যা মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।