ভারতে লকডাউন শিথিল করায় মৃত্যু এবং আক্রান্তের রেকর্ড আর বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৮৬ জন শনাক্তের রেকর্ড
ভারতে লকডাউন শিথিলের পর করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৯৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে সোমবার; দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রেকর্ড ৩ হাজার ৯০০ জন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে ভারতে। করোনায় আক্রান্ত ১৯৫ জন রোগী গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন; এ নিয়ে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জনে। নতুন ৩ হাজার ৯০০ জনকে নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪৬ হাজার ৪৩৩।
মঙ্গলবার সকালের দিকে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৯২ জনের। তাদের মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ৪৬ হাজার ৪৩৩। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২ হাজার ৭২৭ জন। সুস্থ হওয়ার হার ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৫ মার্চ ভারতে প্রথম দফায় লকডাউন জারি করা হয়। এই লকডাউনের মেয়াদ এখন পর্যন্ত দুই দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রোববার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লকডাউনের বিধি-নিষেধ শিথিলের পাশাপাশি গ্রিন জোন এলাকার অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়। তবে বেশ কিছু নতুন শর্তজুড়ে দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়া হয়। দেশটিতে রোববারও করোনায় মারা গেছেন অন্তত ৮৩ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৫৭৩ জন।
দীর্ঘ সময়ের লকডাউনের কারণে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় দেশটির ১৪ কোটি অভিবাসী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়েছেন। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৩০ কোটি মানুষের এই দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের বিকল্প নেই। লকডাউন কার্যকর না থাকলে করোনায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে; যা ইতোমধ্যে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি ভয়াবহ চাপ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৮৬ জন শনাক্তের রেকর্ড
এদিকে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি করোনাভাইরাসে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটি মোট ১৮৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিলো। তবে একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৭৮৬ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ৯২৯ জনে।
মঙ্গলবার (৫ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরেরক রোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয় হাজার ১৮২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় পাঁচ হাজার ৭১১টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৯৩ হাজার ৪০৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৭৮৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি গতকালের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৯২৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও একজন। তিনি পুরুষ, ঢাকার বাসিন্দা, বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে মারা গেছেন ১৮৩ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টা সুস্থ হয়েছেন আরও ১৯৩ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৪০৩ জন।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চলে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১২৮ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ৬৯৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন এক হাজার ২৪৩ জন।
করোনা চিকিৎসায় রাজধানীসহ সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে আট হাজার ৫৯৪টি। তন্মধ্যে রাজধানী ঢাকায় দুই হাজার ৯০০ টি এবং রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ হাজার ৬৯৪ টি। এসব হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ৩৩০টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি।
গত ঘণ্টায় হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারান্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৪৭৭ জনকে এবং এ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৮১১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ২৮৮ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৬৮৯ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪১ হাজার ১২২ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হলেও করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বেই তাণ্ডব চালাচ্ছে। মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩৬ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াই লাখ। তবে ১২ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে ছুটি। বন্ধ বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে শর্তসাপেক্ষে শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্তও হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।