গত ১৫ এপ্রিল জামালপুর সদর থানাধীন ০২নং শরিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আলম ও ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলাম সফি’র বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ এনে স্থানীয় রঘুনাথপুর গ্রামে বিক্ষোভ করেছে হাজারো জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আলমের বিরুদ্ধে চাল চুরির মদদদাতা বলে শ্লোগান দেয়। উক্ত মিছিলে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার জের ধরে শরিফপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক মেরাজুল হক মাষ্টারকে বহিস্কার করা হয়েছে। পরদিন ১৬ এপ্রিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে উক্ত বহিস্কারাদেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আলম নিজেই উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
উল্লেখ্য যে, গত বুধবার সকালে রঘুনাথপুর গ্রামের চাঁন্দু মিয়ার ছেলে জিয়াউল হকের বাড়ীতে ভটভটি যোগে কিছু সরকারী চাল আনা হয়। বিকালে উক্ত চাল বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় ভরে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা বাধা প্রদান করলে ইউপি সদস্য সফি ও তার ছেলে উপজেলার চাল বলে স্থানীয়দের বুঝিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা সকলে জিয়াউল হকের কাছে উক্ত চাল সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়। এতে সন্দেহ হলে তারা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করে।
সে মোতাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উনার টিম নিয়ে তল্লাশি করে ওই ঘর থেকে ত্রাণের চালের ২২টি খালি বস্তা ও ৫০কেজির বস্তায় ও ড্রামে থাকা প্রায় ৮০ কেজি চাউল জব্দ করেন। এর আগেই করোনা ভাইরাস সংকটে ত্রাণ না পাওয়া হাজারো জনতা ইউপি চেয়ারম্যান আলম ও ইউপি সদস্য সফিকে চোর দাবী করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ও বিভিন্ন শ্লোগান দেয় ।
জব্দ করা চাল সম্পর্কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসনের জোষ্ঠ্যে সহকারী কমিশনার এস এম মাজহারুল ইসলাম জানান, ৫০ কেজি বস্তার ২২ টি খালি এবং চালসহ তিনটি বস্তা জব্দ করা হয়েছে।
এবিষয়ে বহিষ্কৃত সহ-দপ্তর সম্পাদক মেরাজুল হক মাষ্টারের সাথে কথা বললে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থানীয় কতিপয় লোকের সাথে কথা বললে তারা জানান-এলাকার মানুষ সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। তারা চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে সাহায্যের জন্য গেলে তারা বলে সরকার কোনো অনুদান দেয়নি। আর দিবে কিনা তাও জানে না তারা। ত্রাণ বা চাল যেহেতু আসে নাই-তবে এই চাল কিসের ও উদ্ধারকৃত খালি বস্তা কোথা থেকে আসলো? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন প্রশাসনের দিকে। একই সাথে তারা বলেন, চাল পাওয়া গেল, বস্তা পাওয়া গেল-সেগুলো কার, কোথা থেকে এলো, কার মাধ্যমে এলো-সেসবের তদন্ত ও বিচার না করেই হাজারো জনতার মিছিলে শ্লোগান ধরার নাম করে একজন জনবান্ধব, ত্যাগী নেতাকে বহিষ্কার করা হলো। এটা দুঃখজনক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন যুবলীগের এক সদস্য জানান, শরিফপুর ইউনিয়নে সিন্ডিকেট রাজনীতি চলে, বলতে গেলে পকেট কমিটি। চলছে চাল চুরিসহ বিভিন্ন অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, তাদের প্রতিবাদ করার মত কেউ নেই, তাদের বিরুদ্ধে গেলে দলীয় পদ হারানোসহ নানারকম বিভ্রান্তি ও হয়রানি হতে হয়। এ থেকে শরিফপুর ইউনিয়নবাসী মুক্তি চায়, চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ আনায় পদ হারাতে হয়। যদি সুষ্ঠু তদন্ত না করে এভাবে পদ খেয়ে দেওয়ার অধিকার তারা রাখে তাহলে তো ভবিষ্যতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মত কোন লোক থাকবে না। আওয়ামী লীগ তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, চোরদের নয়।
তারাই চেয়ারম্যান, তারাই মেম্বার, ওনাদের বাপ, চাচা, ভাই, বন্ধু, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, সেচ্ছাসেবী লীগ। এমন পকেট রাজনীতি থেকে বের হতে পারলেই শরিফপুর ইউনিয়নে চাল চুরি, গম চুরি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে বলে মনে করে ইউনিয়নবাসী এবং তৃনমূল আওয়ামীলীগ। স্থানীয় জনগণ চাল চুরির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত সবার শাস্তি দাবী করেন।