মাহে রমযান আসন্ন; তারাবীহ নামাজ ঘরে পড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

মাহে রমযান মানেই ইবাদতের বাম্পার মৌসুম। প্রত্যেক আমলেরই ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বা তার থেকেও বেশি সওয়াব। সেই সাথে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর। আর প্রতিদিন রাতে সালাতুল তারাবীহ। যদিও এবার বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় মসজিদে জামায়াতও সীমিত করা হয়েছে। তাই তারাবীহ মসজিদে জামায়াতে হবেনা, ঘরে এককভাবে আদায় করতে আহবান জানানো হয়েছে। 

তারাবীহ শব্দটি মূলতঃ আরবী। এর বাংলা রূপ ‘তারাবী’ যার অর্থ হলো বিশ্রাম গ্রহণ করা । এ শব্দের ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন تراويح শব্দটি ترويحة শব্দের বহুবচন । ترويحة অর্থ একবার বিশ্রাম গ্রহণ করা । যেমন تسليمة শব্দের অর্থ একবার সালাম দেওয়া । মাহে রমযান এর বরকতময় রজনীতে জামা’আতের সঙ্গে যে নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুত তারাবীহ বলে । এ নামকরণের কারণ হচ্ছে যখন থেকে সাহাবায়ে কেরাম এ নামায সম্মিলিতভাবে আদায় করতে আরম্ভ করেন তখন থেকেই তারা প্রতি দু’সালামের পর অর্থাৎ চার রাকাতের পর বিশ্রাম নিতেন । -ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ), আহমাদ ইবনু আলী (৮৫৫ হিঃ), ফাতহুল বারী, (বৈরুত, দারুল মারিফা), প্রকাশকাল ১৩৭৯ খন্ড ৪, পৃঃ ৫০ ।
আল্লামা বদরুদ্দীন আঈনী (রহঃ) বলেন تراويح শব্দটি ترويحة এর বহুবচন । ترويحة এর বহুবচন ترويحات ও হতে পারে। মূলে এর অর্থ হচ্ছে বিশ্রাম গ্রহণ করা । প্রতি চার রাকাতের পর লোকেরা কিছু সময় বসার মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহন করত বলেই তাকে তারাবীহ নামকরণ করা হয। পরবর্তীতে রুপকভাবে চার রাকাতকেই এক তারবীহ বলা হত। – উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহুল বুখারীঃ আল্লামা বদরুদ্দীন আঈনী (রহঃ) (মূলফাত প্রথম প্রকাশকাল ১৭ই এপ্রিল ২০০৬) খন্ড ১৭, পৃঃ ১৫০।
আল্লাম ইবনে নুযাইম আল মিসরী (রহঃ) বলেন- تراويح শব্দটি ترويحة শব্দের বহুবচন। এর মাসদার হচ্ছে الاستراحة যার অর্থ বিশ্রাম গ্রহণ করা। প্রতি চার রাকাতের পর লোকেরা কিছু সময় বসার মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহণ করত বলেই তাকে তারাবীহ নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে রুপকভাবে চার রাকাতকেই এক তারাবীহা বলা। মুসান্নিফ ইহাকে সুন্নাত হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন এবং হিদায়ার লেখক এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন। “খুলাসাহ” গ্রন্থে বর্নিত আছে- তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তবে কেউ কেউ মতবিরোধ করেছে। ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) তারাবীহ সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত করেন এবং তিনি বলেন হযরত ওমর (রাঃ) যে পদ্ধতি চালু করেছেন তাতে তিনি বিদ’আতী নন।-ইবনে নুযাইম আল মিসরী (রহঃ) আল বাহরুর রায়েক শারহু কানযুদ দাকায়েক (বৈরুত, দারুল কুতুবুল ইলমীয়া প্রথম প্রকাশ ১৯৯৭ ৪র্থ খন্ড পৃঃ ৩১২)।
মাহে রমদ্বানের রাতে ইশার নামাজের পর (জামাতবদ্ধ হয়ে) যে সুন্নাত নামায পড়া হয়, তাকে تراويح বলে । যখন থেকে সাহাবায়ে কিরাম এ নামায সম্মিলিতভাবে আদায় করতে শুরু করেন, তখন থেকেই তারা প্রতি দু’সালাতের (অর্থাৎ চার রাকায়াতের) পর বিশ্রাম গহণ করতেন, তাই এ নামাযকে সালাতুত তারাবীহ বলা হয় ।
কেউ কেউ বলেন- তারাবীহ নামাযের মাধ্যমে মুমিন বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে চির সুখের আবাসন জান্নাত লাভের সৌভাগ্য অর্জনে সমর্থ হয় তাই একে তারাবীহ নামকরন করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আসন্ন রমযান মাসে তারাবিহ নামাজ ঘরে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। গণভবন থেকে তিনি এই ভিডিও কনফারেন্স করেন।

সিয়াম সাধনার মাস রমজানে মুসলমানরা রাতে এশার নামাজের পর ২০ রাকাত বিশিষ্ট তারাবিহ নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করে থাকেন। আগামী ২৫ বা ২৬ এপ্রিল চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে রমজান মাস শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, সৌদি আরবে নামায, জামাত বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি তারাবিহ নামাজ সেখানে হবেনা, সবাই ঘরে পড়বে। খুব সীমিত আকারে সেখানে তারা করছে। তারা নিষেধ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ঠিক এভাবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, এমনকি ভ্যাটিকান সিটি থেকে শুরু করে সব জায়গায় তারা সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। নিজেদের সুরক্ষিত করা, অন্যকে সুরক্ষিত করা।’

‘কাজেই এই বিষয়গুলো থেকে আমাদেরও শিক্ষার বিষয় আছে। যে কারণে আমরা মসজিদে না গিয়ে নিজের ঘরে বসে নামাজ পড়বো, কারণ- আল্লাহর এবাদত তো আপনি যে কোনো জায়গায় বসে করতে পারেন। এটাতো আল্লাহর কাছে আপনি সরাসরি করবেন। কাজেই বরং আপনার এবাদত করার একটা ভালো সুযোগ আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে রোজা, এই রমজান মাসে আমাদের কোনো পণ্য পরিবহন ও খাদ্যসামগ্রীর কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। সেই সাথে এখানে তারাবিহর নামাজ, যেহেতু সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশে হচ্ছে না, আমাদের এখানেও ঘরে বসে নামাজ পড়বো।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা মেনে আপনারা ঘরে বসে তারাবিহ পড়ুন।

‘আল্লাহকে ডাকতে হবে, এবাদত করতে হবে। আপনি আপনার মতো করে যত ডাকতে পারবেন আল্লাহ সেটাই কবুল করবে, কাজেই সেভাবেই আপনারা করবেন।’