হোম শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য করোনায় দেয়ালবন্দি শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভাবনা

করোনায় দেয়ালবন্দি শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভাবনা

” তবে খুশির সংবাদ হলো “সংসদ বাংলাদেশ” টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে “আমার ঘরে আমার স্কুল” শিরোনামে পড়ানো হচ্ছে। এই ডিজিটাল পদ্ধতির ক্লাসে স্যার/ম্যাডামরা ভালোভাবে বুঝাচ্ছেন। আমরাও এতে খুব উৎসাহের সাথে পড়ছি তবে আরো বেশি ভালো হতো যদি একই বিষয়ে বারংবার পুনঃপ্রচার না করে বিষয়ভিত্তিক নতুন নতুন অধ্যায় পড়ানো হতো ”

মুক্তবিহঙ্গের মত বিচরণ করাই ছোটদের স্বভাব কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে আজ আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনে। স্কুলের খোলা মাঠে অপলক নয়নে দূরাকাশে তাকানো, বন্ধুদের সাথে গল্প তর্কে আড্ডা দেওয়া, গুচ্ছ ভাবে পড়া মুখস্থ করা, টিফিনের সময় বন্ধুর মায়ের হাতর রান্না করা নুডুলস, বিরানী ভাগাভাগি করে খাওয়া, স্কুল হতে বাড়ি ফেরার পথে মামনি নিষেধ করা সত্ত্বেও জেদ ধরে চকলেট, আইসক্রিম, ঝালমুড়ি, ফুচকা, পপকর্ণ কিনে খাওয়ার মজার দৃশ্য মনে পড়ে বারংবার।

জন্মদিনে মাথায় আটা ছিটানো ও বাসা থেকে চুরি করে নেয়া ডিম বন্ধুদের মাথায় ভাঙ্গা ও টিচারদের ভালবাসার বকুনি খাওয়া, বন্ধুর বেঞ্চে বসার স্থানে চক ঘষা, পিছন থেকে তার জামায় কলমের বক্র রেখা টানা, তেতুল পেরে খাওয়ার বিষয়গুলি হোম কোয়ারেন্টাইনের নবাগত মানুষ হিসেবে আমাকে ভাবাচ্ছে নতুন ভাবে।

সকালে ঘুম থেকে জাগতে দেরি হলে মায়ের মিষ্টি বকুনি সাথে নরম হাতের দু-একটা ঝাকুনি, আবার বিলম্বে স্কুলে পৌঁছালে স্কুলের মাঠ পরিষ্কার করা, ম্যামের বকুনি খাওয়া, স্কুল কামাই করলে সমস্ত ক্লাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি আজ ভুলতে বসেছি। আমাদের বিদ্যালয় ও খেলার মাঠটি একেবারেই আমাদের বাসার সংলগ্ন। চিরচেনা স্কুলের সেই খেলার মাঠটি আজ  একেবারেই ফাঁকা। মাঠে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও যাওয়ার উপায় নেই। নিম গাছগুলি মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে, পাখিরা করছে কোলাহল, শুধু হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে মানব জাতি।

আমাদের বাসা হতে কবে যে স্কুলের উদ্দেশ্যে বাহিরে গিয়েছিলাম সেই তারিখটা মনে নেই। করোনাভাইরাসের আশঙ্কা হতে মুক্ত হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে স্বাভাবিক নিয়মে আবার কবে স্কুলে যাব সেটাও অজানা। প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ না থাকায় টিভি আর কম্পিউটার একমাত্র ভরসা, ফলে মাঝে মাঝে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই দু’টি পড়ে শান্তনা পাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। অনুরূপভাবে কষ্ট হলেও আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনে মেনে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে সহযোগিতা করব- ইনশাল্লাহ।

আমরা পৃথিবীর মানুষ আজ খাঁচায় বন্দী পাখির মত। শখের বশে যারা খাঁচায় পাখি পোষেন তাদের উচিত হোম কোয়ারেন্টাইন অভিজ্ঞতার আলোকে খাঁচায় বন্দী পাখিকে মুক্তাঙ্গনে ছেড়ে দেওয়া। তবে খুশির সংবাদ হলো “সংসদ বাংলাদেশ” টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে “আমার ঘরে আমার স্কুল” শিরোনামে পড়ানো হচ্ছে। স্যার, ম্যাডাম ভালোভাবে বুঝাচ্ছেন। আরো বেশি ভালো হতো যদি একই বিষয়ে বারংবার পুনঃপ্রচার না করে বিষয়ভিত্তিক নতুন নতুন অধ্যায় পড়ানো হতো।

আনিশা রহমান নূর/ রহমান নূরাম মুবিনা হৃদি;  শেরেবাংলা নগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা। শিশু লেখক