বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে ৪৭ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আর এতে আক্রান্ত হয়েছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৭জন।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) ওয়ার্ল্ডোমিটারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তের সংখ্যায় অনেক আগেই চীনকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (১ এপ্রিল) দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৪৯ জন। এখন পর্যন্ত এটাই যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০২।
মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে শুধু ইতালি (১৩ হাজার ১৫৫ জন) ও স্পেন (৯ হাজার ৩৮৭ জন)। আর আক্রান্তের সংখ্যায় সবার ওপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটিতে করোনায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে নিউ ইয়র্ক। গোটা দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীই এ অঙ্গরাজ্যের। বুধবার এ অঞ্চলে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯১৭ জন। এরপর নিউ জার্সিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার মানুষ, মারা গেছেন ২৬৭ জন।
তবে হঠাৎ করেই তৃতীয় হটস্পট হয়ে উঠেছে মিশিগান। এ অঙ্গরাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৮ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩৭ জন। এ অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ।
ভারতে বুধবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩৭ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এটাই একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। এদিন সেখানে মারা গেছেন অন্তত ছয়জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১।
জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ৭৭৯২১ জন করোনাভাইরারে আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৯২৫ জন। ১ এপ্রিল দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬১১৩ জন আর মারা গেছেন ১৫০ জন, যা একদিনে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড।
এদিকে করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইউরোপের দেশ স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৯২৩ জনের প্রাণ গেছে। ফলে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু আগের দিনের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
স্পেনে একদিনে রেকর্ড ৯২৩ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা, যা আগের দিনের তুলনায় বেশি। এর আগে বুধবার দেশটিতে ৮৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। আর তার আগের দিন মঙ্গলবার মৃত্যু হয় ৮৪৯ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে মোট ৯ হাজার ৩৮৭ জনের মৃত্যৃ হয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইতালির। দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে বুধবার (১ এপ্রিল) একদিনে প্রাণঘাতী করোনায় মারা গেছেন ৭২৭ জন। এ নিয়ে ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে মোট দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৫৫।
এর আগে করোনাভাইরাসের হালনাগাদ হিসাব রাখা জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সর্বোচ্চ ৮৮৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সর্বশেষ মারা গেছে ৬ সপ্তাহ বয়সী এক শিশু।
অনেক আগেই করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজারের বেশি। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মজুত চিকিৎসা সরঞ্জামও শেষের পথে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে দেশটির প্রভাবশালী এই দৈনিকটি জানিয়েছে, এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গরাজ্য সরকার চিকিৎসা ও সুরক্ষা সরঞ্জাম পেতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের চেষ্টা চলছে। এজন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বরাদ্দ হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে প্রকট আকার নিচ্ছে তা কতটা সামাল দেওয়া সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবকটিতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বাজে অবস্থা জনবহুল অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্কের। শুধু নিউইয়র্কেই ১ হাজার ৩০০ এর বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
নতুন করে আরও তিন অঙ্গরাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য তিনটি হলো ফ্লোরিডা, জর্জিয়া এবং মিসিসিপি। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষ এখন লকডাউন পরিস্থিরি মধ্যে রয়েছেন। ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।