সামাজিক সংগঠন ‘ইয়েস বাংলাদেশ’ ও ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ যৌথভাবে ‘’আসুন- একদিন তাদের ঘরে রাখি’’ উদ্যোগ চালাচ্ছে। অন্তত একটি দিন যেন তারা কাজে না যায় সেজন্য খাদ্য বিতরণ করেছে সংগঠনের তরুণ সমাজকর্মীরা। দিচ্ছেন মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও হাতে বানানো স্প্রে। দেখাচ্ছেন কোথায়, কিভাবে তা ব্যবহার করবে। তারা কাজ করছেন করোনা ভাইরাস ও তা থেকে নিরাপদ থাকা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে। ইয়েস বাংলাদেশের অন্যতম উদ্যোক্তা জুবায়ের আলমের নেতৃত্বে এই মহতী কাজে অংশ নেন শাহজালাল আলিফ, রবি, আব্দুল্লাহ তুষার, তামিম নূর, শিহাব, রাফসা্ন, আরিফ জামান ও আরো অনেকেই।
করোনা ভাইরাস! এতদিনে আমরা এই ভাইরাসের ভয়ঙ্কর রূপ সম্পর্কে সবাই অবগত হয়েছি। ইউনিসেফ ইতোমধ্যে একে মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোও আজ লকডাউনের মধ্যে রয়েছে । এই মহামারি থেকে রক্ষার অন্যতম পন্থা ঘরে আবদ্ধ থাকা। আমাদের দেশ নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে ঘরে থাকলেও পেট মহাশয় তো চালাতে হয়। আমাদের অনেকেই তাই একমাস কিংবা তারও বেশি সময়ের খাবার কিংবা দরকারি জিনিসপত্রের মজুদ রেখেছি কিংবা ব্যবস্থা করার সামর্থ্য রাখি। কিন্তু যে মানুষগুলো দিন আনে দিনে খায়? রিকশার চাকা না ঘুরলে রিকশাওয়ালার চুলা জ্বলবে কিভাবে? দিনমজুর লোকটিই বা তার পরিবারের সদস্যদের পেট ভরাবেন কিভাবে?
ইয়েস বাংলাদেশের উদ্যোক্তা জুবায়ের আলমের সাথে কথা বললাম, সোজা শব্দে তিনি বললেন- আমি বাসায়, আপনি বাসায়, আমরা এমন ১০/১৫ দিন বাসায় থাকতে পারবো, কোনো অসুবিধা ছাড়াই। কিন্তু, যারা দিন এনে দিন খায়, যাদের দৈনিক রোজগারের ওপর তাদের পরিবার নির্ভরশীল, তারা তো চাইলেও ঘরে বসে থাকতে পারবেন না। পেট বাঁচাতে তাদের বাইরে বের হতেই হচ্ছে সব কিছু উপেক্ষা করে। এমন ৫০টা পরিবারের জন্য ছিল আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। শাহবাগ, টিএএসসি, সেগুন বাগিচা, কাকরাইল, পল্টন , চানখারপুলসহ আশেপাশের এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে আমরা চেষ্টা করেছি জিনিসগুলো পৌঁছে দেয়ার। খুব বেশি উপকার না হোক, একটু হলেও জনসচেতনতা তৈরি হোক, সবাই জানুক, সতর্ক হোক, এটাই লক্ষ্য।
শাহজালাল আলিফ, রবি, আব্দুল্লাহ তুষার, তামিম নূর, শিহাব, রাফসা্ন, আরিফ জামান– বয়সে সবাই তরুণ, কিন্তু উদ্যমী, সাহসী। সবার চিন্তা- এরকম আরো অনেক পেশার মানুষ আছে যাদের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের প্রতি মানবতার হাত বাড়ানোর এখনই সময়। খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও আমরা আমাদের জায়গা থেকে অল্প কিছু করে হলেও সাহায্য করে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
আজকে আমরা বাইরে বেরোলে যে টাকাটা আমাদের খরচ হতো তার অর্ধেক কিংবা সেই টাকাটা যদি আমরা তাদের জন্য দিয়ে দিই হয়তো তাদের একবেলার খাবারের ব্যবস্থা করা যাবে, সৃষ্টিকর্তাও খুশি হবেন।
তাদের আহ্বান- আসুন আমরা আমাদের যার যার জায়গা হতে খুব বেশি না হলেও অল্প কিছু দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই, সাহায্য করি। তা নাহলে হয়তো এই দুর্দিন কেটে যাবে ঠিকই, কিন্তু বাসা থেকে বেরোলে আর এই মানুষগুলোকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ভালোবাসার মানুষটার সাথে কিংবা কলিজার বন্ধুটার সাথে রিক্সায় চড়াও আর হবেনা “মামা যাবেন?” “মামা বাদাম দাও” “মামা চা তে চিনি একটু কম দিও” কিংবা “মামা… এসব বলার মত মামা খুব বেশি পাওয়া যাবেনা।