সোবহানাল্লাজি আসরা বি আবদিহি লাইলাম মিনাল মাসজিদিল হারামি ইলাল মাসজিদিল আকসা। কুরআনুল কারীমে এভাবেই পবিত্র শবে মেরাজের বর্ণনা শুরু করেছেন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন।
নবী করিম (দঃ)এর মুজিযাসমূহের মধ্যে মেরাজে গমন একটি বিস্ময়কর মোজেজা। এ জন্যই মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করার আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ্ পাক ‘সোবহানাল্লাহ্’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যা আশ্চর্য্যজনক ঘটনার সময়ই ব্যবহার করা হয় । স্ব-শরীরে মেরাজ গমনের প্রমাণ স্বরূপ কোরআনের ‘বিআব্দিহী’ শব্দটি তাৎপর্য্যপূর্ণ। কেননা ‘আব্দুন’ শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় রুহ ও দেহের সমষ্টিকে। তদুপরি বোরাক প্রেরণ ও বোরাক কর্তৃক নবী করিম (দঃ)কে বহন করে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেও স্ব-শরীরে মেরাজ গমনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মিরাজের ঘটনাটির সাথে গতির সম্পর্ক এবং সময় ও স্থানের সঙ্কোচনের তত্ত্ব জড়িয়ে আছে। আলোর গতি সেকেন্ডে একলক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। পৃথিবীতে সূর্যের আলো পৌঁছাতে সময় লাগে আট মিনিট বিশ সেকেন্ড । এ হিসেবে পৃথিবী হতে সূর্যের দূরত্ব নয় কোটি তিরিশ লক্ষ মাইল । অথচ নবী করিম (দঃ) মূহুর্তের মধ্যে চন্দ্র, সূর্য, সিদরাতুল মোন্তাহা, আরশ-কুরছি ভ্রমন করে লা-মাকানে খোদার দীদার লাভ করে নব্বই হাজার কালাম করে পুনরায় মক্কা শরীফে ফিরে এলেন। এসে দেখলেন বিছানা এখনো গরম রয়েছে। এর চেয়ে আশ্চর্য আর কি হতে পারে?
ফারসি ‘শব’ এর অর্থ- রাত্র এবং আরবি ‘মেরাজ’ এর অর্থ- ঊর্ধ্বারোহন। মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৬ রজব দিবাগত রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। এ বছর সেই রাতটি পড়েছে আগামী ২২ মার্চ দিবাগত রাতে।
মেরাজের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো– অন্যান্য নবীগনের সমস্ত মোজেজা নবী করিম (দঃ) এর মধ্যে একত্রিত হয়েছিল । হযরত মুছা (আঃ) তূর পর্বতে খোদার সাথে কালাম করেছেন । হযরত ঈছা (আঃ) স্ব-শরীরে আকাশে অবস্থান করেছেন এবং হযরত ইদ্রিছ (আঃ) স্ব-শরীরে বেহেস্তে অবস্থান করছেন । তাঁদের চেয়েও উন্নত মকামে বা উচ্চমর্যায় আল্লাহ্ পাক নবী করিম (দঃ) কে নিয়ে সবার উপরে তাকে মর্যাদা প্রদান করেছেন। মুছা (আঃ) নিজে গিয়েছিলেন তূর পর্বতে। আর আমাদের প্রিয় নবী করিম (দঃ) কে আল্লাহ্ তাআলা দাওয়াত করে বোরাকে চড়িয়ে ফেরেস্তাদের মিছিল সহকারে বায়তুল মোকাদ্দাছে নিয়েছিলেন। সেখানে সমস্ত নবীগণকে স্ব-শরীরে উপস্থিত করে হুজুর করিম (দঃ) এর মোক্তাদী বানিয়েছিলেন। সেদিনই সমস্ত নবীগণের ইমাম হতে নবী করিম (দঃ) ‘নবীগণেরও নবী’ বাস্তবে প্রমাণীত হয়েছিলো। সমস্ত নবীগণ অষ্ট অঙ্গ (দুই হাত, দুই পা, দুই হাটু, নাক ও কপাল) দিয়ে স্ব-শরীরে নামাজ আদায় করেছিলেন সেদিন । সমস্ত নবীগণ স্ব-শরীরে জীবিত, তারই বাস্তব প্রমাণ হয়েছিল মেরাজের রাত্রে ।
মেরাজের রাত্রে নবী করিম (দঃ) কে প্রথম সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল জিব্রাইল, মিকাইল ও ইস্রাফিল (আঃ) ফেরেস্তাত্রয়ের অধীনে সত্তর হাজার ফেরেস্তা দিয়ে। দ্বিতীয় সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল নবী (আঃ) গনের মাধ্যমে । তৃতীয় সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল আকাশের ফেরেস্তা ও হুর দিয়ে এবং চতুর্থ ও শেষ সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলা । সিদ্রাতুল মোন্তাহা ও আরশ মোয়াল্লা অতিক্রম করার পর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা একশত বার সম্বর্ধনামূলক বাক্য ادن منى يا محمد অর্থাৎ ‘হে প্রিয় বন্ধু মোহাম্মদ, আপনি আমার অতি নিকটে আসুন’– বলে নবী করিম (দঃ) কে সম্মানীত করেছিলেন। কোরআন মজিদে ثُمَّ دَنَا فَتَدَ لَّى আয়াতটি এদিকেই ইঙ্গিতবহ বলে তাফসীরে মুগ্নী ও মিরছাদুল ইবাদ গ্রন্থদ্বয়ের বরাত দিয়ে রিয়াজুন্নাছেহীন কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত কিতাবখানা সাতশত বৎসর পূর্বে ফারসি ভাষায় লিখিত।
মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল নবুয়তের ১১ বৎসর ৫ মাস ১৫ দিনের মাথায় । অর্থাৎ প্রকাশ্য নবুয়তের ২৩ বৎসর দায়িত্ব পালনের মাঝামাঝি সময়ে । সে সময় হুজুর (দঃ) এর বয়স হয়েছিল ৫১ বৎসর ৫ মাস ১৫ দিন। সন ছিল নবুয়তের দ্বাদশ সাল।
তিনটি পর্যায়ে মেরাজকে ভাগ করা হয়েছে । মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মোকাদ্দাছ পর্যন্ত মেরাজের অংশকে বলা হয়ে ইস্রা বা রাত্রিকালীন ভ্রমন। বায়তুল মোকাদ্দাছ থেকে সিদ্রাতুল মোন্তাহা পর্যন্ত অংশকে বলা হয় মেরাজ । সিদ্রাতুল মোন্তাহা থেকে আরশ ও লা-মকান পর্যন্ত অংশকে বলা হয় ই’রাজ; কিন্তু সাধারণভাবে পূর্ণ ভ্রমণকেই এক নামে মেরাজ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কোরআন, হাদিসে মোতাওয়াতির এবং খবরে ওয়াহে দ্বারা যথাক্রমে এই তিনটি পর্যায়ের মিরাজ প্রমাণীত ।
মিরাজের প্রথম পর্যায়:
মাহে রজব চাঁদের ২৭ তারিখ সোমবার রাত্রের শেষাংশে নবী করিম (দঃ) বায়তুল্লায় অবস্থিত বিবি উম্মেহানী (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করছিলেন। উক্ত গৃহটি ছিল বর্তমান হেরেম শরীফের ভিতরে পশ্চিম দিকে। হযরত জিবরাইল (আঃ) ঘরের ছাদ দিয়ে প্রবেশ করেন এবং দয়াল নবীজীকে বিশ্রামরত অবস্থায় পান। এমতাবস্থায় উনার নূরানি জিহ্বা দিয়ে অন্য রেওয়ায়েত মোতাবেক-গণ্ডদেশ দিয়ে নবী করিম (দঃ) এর কদম মোবারকের তালুতে স্পর্শ করতেই হুযুরের তন্দ্রা টুটে যায়। জিবরাইল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে দাওয়াত জানালেন এবং নবীজীকে যমযমের কাছে নিয়ে গেলেন। সিনা মোবারক বিদীর্ন করে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করে নূর এবং হেকমত দিয়ে পরিপূর্ন করলেন। এভাবে মহাশূন্যে ভ্রমণের প্রস্ততিপর্ব শেষ করলেন।
নিকটেই বোরাক দণ্ডায়মান ছিল। বোরাকের আকৃতি ছিল অদ্ভুত ধরনের। গাধার চেয়ে উঁচু, খচ্চরের চেয়ে নীচু, মুখমন্ডল মানুষের চেহারাসদৃশ, পা উটের পায়ের মত এবং পিঠের কেশর ঘোড়ার মত (রুহুল বয়ান-সুরা ইসরা)। মূলতঃ বোরাক ছিল বেহেস্তী বাহন- যার গতি ছিল দৃষ্টি সীমান্তে মাত্র এক কদম। নবী করিম (দঃ) বোরাকে সওয়ার হওয়ার চেষ্টা করতেই বোরাক নড়াচড়া শুরু করলো । জিব্রাইল (আঃ) বললেন- “তোমার পিঠে সৃষ্টির সেরা মহামানব সওয়ার হচ্ছেন- সুতরাং তুমি স্থির হয়ে যাও । বোরাক বলল, কাল হাশরের দিনে নবী করিম (দঃ) আমার জন্য আল্লাহর দরবারে শাফাআত করবেন বলে ওয়াদ করলে আমি স্থির হবো। নবী করিম (দঃ) ওয়াদা করলেন, বোরাক স্থির হলো। তিনি বোরাকে সওয়ার হলেন। জিব্রাইল (আঃ) সামনে লাগাম ধরে, মিকাইল (আঃ) রিকাব ধরে এবং ইস্রাফিল (আঃ) পিছনে পিছনে অগ্রসর হলেন। পিছনে সত্তর হাজার ফেরেস্তার মিছিল। এ যেন দুলহার সাথে বরযাত্রী। প্রকৃতপক্ষে নবী করিম (দঃ) ছিলেন আরশের দুলহা (তাফসীরে রুহুল বয়ান)।
মক্কা শরীফ থেকে রওনা দিয়ে পথিমধ্যে মদিনার রওযা মোবারকের স্থানে গিয়ে বোরাক থামল। তথায় তিনি দু’রাকাত নামায আদায় করলেন। এভাবে ইছা (আঃ) এর জন্মস্থান বাইতুল লাহাম বা বেথেলহাম এবং মাদ্ইয়ান নামক স্থানে শুয়াইব (আঃ) এর গৃহের কাছে বোরাক থেকে নেমে নবী করিম (দঃ) দু’রাকাত করে নামায আদায় করলেন । এজন্যই বরকতময় স্থানে নামায আদায় করা ছুন্নত । এই শিক্ষাই এখানে রয়েছে। নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন, আমি বোরাক থেকে দেখতে পেলাম- হযরত মুছা (আঃ) তাঁর মাযারে (জর্দানে) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। প্রমাণ হয় সকল নবীগণ আপন আপন রওজায় জীবিত ও আমল করে থাকেন।
অতঃপর জিবরাইল (আঃ) বায়তুল মোকাদ্দাছ মসজিদের সামনে বোরাক থামালেন। সমস্ত নবীগণ পূর্ব হতেই সেখানে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। জিবরাইল (আঃ) বোরাককে রশি দিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাছে ছাখ্রা নামক পবিত্র পাথরের সাথে বাঁধলেন এবং আযান দিলেন। সমস্ত নবীগণ (আঃ) নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। হযরত জিবরাইল (আঃ) নবী করিম (দঃ) কে মোসল্লাতে দাঁড় করিয়ে ইমামতি করার জন্য অনুরোধ করলেন। হুযুর (দঃ) সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সত্তর হাজার ফেরেশতাকে নিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করলেন। তখনো কিন্তু নামায ফরজ হয়নি। প্রশ্ন জাগে- নামাযের আদেশ নাযিল হওয়ার পূর্বে হুযুর (দঃ) কিভাবে ইমামতি করলেন ? বুঝা গেল- তিনি নামাযের নিয়ম কানুন পূর্বেই জানতেন । নামাযের তা’লীম তিনি পূর্বেই পেয়েছিলেন; তানযীল বা নাযিল হয়েছে পরে । আজকে প্রমাণিত হলো- নবী করিম (দঃ) হলেন ইমামুল মোরছালিন ও নবীউল আম্বিয়া (আঃ) । প্রমাণ হলো, নবীগণ ইন্তেকালের হাজার হাজার বছর পরও মুহূর্তেই স্বশরীরে যে কোন স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন ও খবরাখবর সম্পর্কে অবগত আছেন। প্রমাণ হলো, রাসুল (দঃ) আগে থেকে নামাজের সকল বিষয় অবগত এবং উনিই সায়্যিদুল আম্বিয়া। নামায শেষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সভায় নবীগণ নিজেদের পরিচয় দিয়ে বক্তব্য পেশ করলেন। সর্বশেষ সভাপতি (মীর মজলিস) হিসাবে ভাষণ রাখলেন নবী করিম (দঃ)। তাঁর ভাষণে আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করে তিনি বললেন- “আল্লাহ্ পাক আমাকে আদম সন্তানগণের মধ্যে সর্দার, আখেরি নবী ও রাহমাতুল্লিল আলামীন করে প্রেরণ করেছেন”।
[এখানে একটি আকীদার প্রশ্ন জড়িত আছে । তা হলো- আম্বিয়ায়ে কেরামগণের মধ্যে চারজন ব্যতীত আর সকলেই ইতিপূর্বে ইন্তিকাল করেছেন এবং তাঁদের রওযা মোবারকও বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত । যে চারজন নবী জীবিত, তারা হচ্ছেন- হযরত ইদ্রিস (আঃ) বেহেস্তে, হযরত ইছা (আঃ) আকাশে, হযরত খিজির (আঃ) জলভাগের দায়িত্বে এবং হযরত ইলিয়াছ (আঃ) স্থলভাগের দায়িত্বে । জীবিত ও ইন্তিকালপ্রাপ্ত সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) বিভিন্ন স্থান থেকে মুহুর্তের মধ্যে কিভাবে স্বশরীরে বায়তুল মোকাদ্দাছে উপস্থিত হলেন ?
তাফসীরে রুহুল বয়ানে এ প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেয়া হয়েছে- “জীবিত চারজন নবীকে আল্লাহ্ তা’আলা স্বশরীরে এবং ইন্তিকাল প্রাপ্ত আম্বিয়ায়ে কেরামগনকে মেছালী শরীরে বায়তুল মোকাদ্দাছে উপস্থিত করেছিলেন”। কিন্তু অন্যান্য গ্রন্থে স্বশরীরে উপস্থিতির কথা উল্লেখ আছে । কেননা, নবীগণ অষ্ট অঙ্গ দ্বারা সিজদা করেছিলেন । নবীগণ ও ওলীগন মেছালী শরীর ধারণ করে মুহুর্তের মধ্যে আসমান জমিন ভ্রমণ করতে পারেন এবং জীবিত লোকদের মতই সব কিছু শুনতে ও দেখতে পারেন (মিরকাত ও তাইছির গ্রন্থ)। আধুনিক থিউসফীতেও (আধ্যাত্নবাদ) একথা স্বীকৃত । ফিজিক্যাল বডি, ইথিক্যাল বডি, কস্যাল বডি, এস্ট্রাল বডি- ইত্যাদি রূপ ধারণ করা একই দেহের পক্ষে সম্ভব এবং বাস্তব বলেও আধুনিক থিউসোফীর বিজ্ঞানীগণ স্বীকার করেছেন । আমরা মুসলমান । আল্লাহর কুদরত ও প্রদত্ত ক্ষমতার উপর আমাদের ঈমান নির্ভরশীল ।
শবে মেরাজের আমল :
এই পবিত্র মীরাজ শরীফের রাতে ইবাদত এবং দিনে রোজা রাখার প্রসঙ্গে কিছু বর্ননা-
** বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” এ শবে মিরাজ-এর তথা রজব মাসে ২৭ তারিখের রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেন। যেমন –
ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻰ ﺹ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻝ ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ
ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭ
ﻟﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﺑﻊ
ﻭﺍﻟﻌﺸﺮﻳﻦ ﻣﻦ
ﺭﺟﺐ ﻛﺘﺐ ﻟﻪ ﺛﻮﺍﺏ ﺻﻴﺎ ﻡ ﺳﺘﻴﻦ ﺷﻬﺮﺍ .
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রজব মাসের ২৭ তারিখে তথা শবে মিরাজ শরীফ-এর দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে। (সুবহানাল্লাহ) [তথ্যসূত্রঃ আল ইতহাফ- ৫ম খন্ড ২০৮ পৃষ্ঠা; আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার, প্রথম খন্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠা; গুনিয়াতুত্ তালিবীন; ক্বিসমুস্ ছায়ালিস-৩৩২ পৃষ্ঠা] ** এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,-
ﺍﻟﻠﻪ ﺭ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭﺳﻠﻤﺎﻥ ﺍﻟﻔﺎﺭ ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ
ﺭ
ﻟﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥ ﻓﻰ ﺭﺟﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻻ ﻗﺎﻝ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﻳﻮﻣﺎ ﻭ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺫﺍﻟﻚ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﻭﻗﺎﻡ ﺗﻠﻚ
ﺍﻟﻴﻠﺔ
ﻟﺜﻼﺙ ﺑﻘﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻻﺟﺮ ﻛﻤﻦ ﺻﺎﻡ ﻣﺄﺓ ﺳﻨﺔ
ﻭﻗﺎﻣﻬﻤﺎ ﻭﺭﺟﺐ .
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উভয়েই বর্ণনা করেন। আখিরী নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “রজব মাসের এমন একটি দিন ও রাত আছে ঐ রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দিগী করবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমল নামায় ঐ পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে যেই পরিমাণ ছওয়াব কোন ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত-বন্দিগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে রজব মাসের ২৭ তারিখ তথা পবিত্র শবে মি’রাজের রাত ও দিনটি।” (সুবহানাল্লাহ)
পবিত্র মিরাজ শরীফ তিনটি পর্যায়ে সুসম্পন্ন হয়েছিলঃ–
*****************************************
১. ইসরাঃ এ পর্যায়ে মক্কা শরীফ থেকে রাত্রে বুরাকে চড়ে বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা) পর্যন্ত পৌছা- এটাকে বলাহয় ইসরা বা ( নৈশ ভ্রমন)।
২. মিরাজঃ এ পর্যায়ে বুরাকে চড়ে বায়তুল মুকাদ্দস থেকে ৭ম আকাশে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছা- এটাকে বলা হয় মিরাজ বা উর্ধারোহন।
৩. ইরাজঃ দীদারে এলাহীর উদ্দেশ্যে সিদরাতুল মুনতাহা থেকে রফ রফ চড়ে (সবুজ রঙের নুরের চাদর) উর্ধারোহন করে আরশে আজিম তথা লা-মাকানে ( স্থান কাল রহিত) পৌঁছা- এটাকে ইরাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
মিরাজ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি বা সোপান। যেহেতু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কে জান্নাতী এক সোপানের মাধ্যমে উর্ধালোকে ভ্রমন করানো হয়েছিল, তাই এ ভ্রমণকে মিরাজ বলা হয়। ইসলামের পরিভাষায় মসজিদে আকসা থেকে সিদরাতুল মুনতাহা ও তদুর্ধ জগতের ভ্রমনকে মিরাজ বলা হয়। কখনো কখনো উভয় ভ্রমনকে একত্রে ইসরা ও মিরাজ বলা হয়।
জেনে রাখা দরকার, (মি’রাজের রাত্রে) মসজিদে আকসাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নামাযের ইমামতি করেছেন এবং সমস্ত নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) মুক্তাদী ছিলেন। আর তা আত্মিক বা আধ্যাত্মিক ছিল না বরং তা ছিল শারীরিক সমাবেশ। অর্থাৎ সবাই স্বীয় শরীর (মোবারক) নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
মোল্লা আলী ক্বারী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মিরকাতের ৫ম খন্ডের ৪৩০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন -“নামাযের বিভিন্ন কাজ যেমন দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা ইত্যাদি শরীর দিয়ে আদায় করা যায়। শুধুমাত্র আত্মা দিয়ে এই রুকনগুলো আদায় করা যায় না।” [মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, ৫ম খন্ড, পৃ. ৪৩০]
মিরাজুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এক অন্যতম মোজেজা কারণ, এমনটি অন্য কোন নবী বা রাসুলগণের ক্ষেত্রে ঘটানো হয়নি। তাছাড়া মিরাজের প্রতিটি ক্ষণ ও ঘটনা পর্যালোচনা করলে ঈমান-আকীদা-আমলের জন্য পরিপূর্ণ রসদ রয়েছে।- মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম