ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ আমাদের সবার – জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা: শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ আমাদের সবার মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা আমাদের এ দেশে মেজরিটি মাইনরিটি একেবারেই মানিনা। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা এদেশের মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ইসলাম কারো উপর জোর খাটানোর কোনো অধিকার রাখেনা। অন্য ধর্মও কোনো ধর্মের উপর জোর খাটাতে পারবেনা যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে।
শনিবার সকালে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগে চব্বিশের অপরাধের বিচার, তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদদের আত্মার সঙ্গে বেঈমানি করা হবে। তাদের আত্মা কষ্ট পাবে। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলার, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে চলার সুযোগ পেয়েছি তাদের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারবো না।
শাফিকুর রহমান বলেন, সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুর বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিলো। এখানে মেজরিটি মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধরমের ভাই বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা জমি দখল করা হয়েছে , ইজ্জতের উপর হাত দেয়া হয়েছিলো, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্ট করে নাম ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেবো। আমরা নিশ্চিত এই অপকর্মের সাথে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়।
ডা. শফিকুর রহমান, একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতার পর সব দেশ মাথা তুলে দাঁড়ায় কিন্তু বাংলাদেশ কেবল পিছিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা পায়নি জনগণ। একেক সময় একটি দল দেশের জনতাকে পরাধীন করে রেখেছিল। এসব দলের মাঝে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি ফ্যাসিবাদী আচরণে দেশের মানুষকে ভোগান্তি দিয়েছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন আয়োজনের আগে বিডিআর হত্যাসহ নানান অপকর্মে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিচার শেষ করা এখন সময়ের দাবি।
জামায়াত আমির বলেন, কক্সবাজারে সব ধরনের দখলের অভিযোগ শোনা যায়। যেখানে দুর্বৃত্তপনা থাকে সেখানে রাজনীতি থাকে না- সেটা অন্য কিছু। রাজনীতির ছায়ায় দখলবাজি রাজনীতি হতে পারে না। পর্যটন রাজধানী হিসেবে কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। বৈষম্যের শিকার জেলাগুলোতে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া জামায়াতের মূল দায়িত্ব। দেশ আবারো কোনো ফ্যাসিস্টের হাতে যেন না যায় সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবী করে৷ আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। মহা পরিকল্পনাকারী মহান রব্বুল আল আমিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করিনা।
ডা. শফিক আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাড়াবো, সেটা ছিলো আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। যদি বলি একেবারেই পূরণ হয়নি, তাহলে কথাটা সত্য হবেনা। কিন্তু পূরণ হবার বিশাল প্রত্যাশা মানুষের ছিলো। একটা স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা আমরা এখনো পেলাম না।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে সহকারী সেক্রেটারি এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ ও মোহাম্মদ শাহজাহান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি, কক্সবাজার সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম ও প্রচার সেক্রেটারি আল আমীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক জেলা আমির মোস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, জেলা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা সহ-সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামসুল আলম বাহাদুর, কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল হক জিহাদি, শহর আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক, সাবেক মেয়র সরোয়ার কামাল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ বাহাদুর, শহিদুল আলম বাহাদুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিন পর এতোবড় আয়োজন পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন দলটির নেতা কর্মীরা। কর্মী সম্মেলন ঘিরে রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সেজেছে পুরো কক্সবাজার শহর।