জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার ফুলকোচা ইউনিয়নের দ্বিতল বিশিষ্ট মহিরামকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিচতলায় জেনারেল স্বাস্থ্যসেবা। এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে জেনারেল স্বাস্থ্যসেবায় একজন মেডিকেল ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন এসএসিএমও ও একজন অফিস সহায়ক থাকলেও প্রায় দু মাস ধরে আসেন না ডাক্তার তানজিনা তারান্নুম। থাকেন না অফিস সহায়ক মোহাইমিনও। ফার্মাসিস্ট সালেহা খাতুন ও এসএসিএমও রাবেয়া আক্তার কার্যত চালাচ্ছেন এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। এখানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী এলেও ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা। ডাক্তার না থাকায় রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন মেলান্দহ নয়তো জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে। দ্বিতীয় তলায় পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম চলার কথা। তবে দ্বিতীয় তলার সদর দরজায় তালা লাগানো।
মহিরামকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলা দখল করে বসবাস করছেন উপজেলার চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান। দ্বিতীয় তলার একাংশ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভিজিটরের নামে এলটম্যান্ট থাকলেও উপজেলা চেয়ারম্যান সেটি ব্যবহারের কারণে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক তানজিনা তারান্নুম দীর্ঘদিন যাবৎ অনুপস্থিত বলে এলাকাবসীর অভিযোগ। ব্যাহত হচ্ছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানায়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর থেকেই মোঃ কামরুজ্জামান এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দ্বিতীয়তলা দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত লোকজন নিয়ে থাকছেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান সেটি ব্যবহারের কারণে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বন্ধ হয়ে গেছে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম।
চেয়ারম্যানের দাবি, ভিজিটরের আত্মীয় হিসেবে তিনি এখানে থাকছেন। দ্বিতীয় তলায় পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম চলার কথা।
চেয়ারম্যানের পরিচারক খোকন জানায়, সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান এক বছর যাবৎ বসবাস করেন। তার অনুমতি ছাড়া ভিতরে যাওয়া যাবে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হকের কাছে এ ব্যপারে খোঁজ নিতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে মহিরামকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিনা তারান্নুমকে পাওয়া যায়।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাত্র দুইদিন গিয়েছেন স্বীকার করে বলেন, উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা. ফজলুল হক স্যার মৌখিকভাবে ইমারজেন্সি ডিউটিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনে রেখেছেন।
এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা. ফজলুল হকের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাপ্তাহে দুইদিন ডিউটি করবেন, বাকিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আউটডোর ও ইনডোরে রোগী দেখবেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি কই থাকমু তাইলে, উপজেলা চেয়ারম্যান কই থাকবো? ভিজিটর তাহমিনা বেগমের গেস্ট আমি, একজনের বাড়িতে কি আরেকজন থাকতে পারেনা, গেস্ট হিসেবে থাকি আমি।’ কতদিন গেস্ট হিসেবে থাকবেন, জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আরও বলেন, “আমি মাঝে মাঝে থাকি, এইডা সমস্যা কি? আমি কই থাকলাম ঘাঁটাঘাঁটি কইরোনা, সব জায়গায় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি কইরো না, ঘাঁটবার গেলে সমস্যা আছে।”
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামীম আল ইয়ামিন বলেছেন, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার কেন যায়না বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো। তিনি আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনে যান এই বিষয়টি আমি জানি, সেখানে বসবাস করার বিষয়টি আমার জানা নেই।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সাজদা-ই-জান্নাত বলেন, উপরের তলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভিজিটর তাহমিনার থাকার কথা, ভিজিটর প্রতিমাসে ৫’শ টাকা ভাড়াও প্রদান করেন। তিনি যেন সেখানে থাকেন এই বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. গৌতম রায় বলেছেন,স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিভাগের লোক ছাড়া অন্য কারো থাকার নিয়ম নেই। নিয়মিত চিকিৎসক অনুপস্থিতির বিষয়টি তার জানা নেই। এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।