ঝিনাইদহে পানি না থাকায় কমছে পাটের আবাদ। দীর্ঘ তাপমাত্রা, পাট পচনের স্থান স্বল্পতা ও দামের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ কমছে চাষীদের। উৎপাদন কম হওয়ায় পূরণ হচ্ছে না কৃষকদের চাহিদা।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদ হয় ২২ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে কোটচাঁদপুরে ৬৩৫ হেক্টর, ঝিনাইদহ সদরে ৫ হাজার ৭২ হেক্টর, মহেশপুরে ৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর,শৈলকুপায় ৮ হাজার ৪২৫ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ডুতে ২ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়।
চলতি ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে জেলায় পাটের চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৪৪৬ হেক্টর জমিতে। এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ৮০০। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে পাট। এরমধ্যে কালীগঞ্জে ৭১০, মহেশপুরে ৪ হাজার ৭০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৪১৫ হেক্টর, শৈলকুপায় ৮ হাজার ৪৭৭ হেক্টর, হরিণাকুণ্ডুতে ২ হাজার ৭১২ হেক্টর ও ঝিনাইদহ সদরে ৫ হাজার ৬২ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয় শৈলকুপা উপজেলায়
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বিঘা প্রতি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাট চাষে গড়ে খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমান সময়ে সার, কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি ও পাট পচনের স্থান সংকটসহ নানা কারণে খরচ বাড়ছে। এ কারণে ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকাতেও পাট ঘরে তোলার কাজ শেষ হচ্ছে না। দিন দিন বৃষ্টি কমে যাওয়ায় নদী, খাল-বিলসহ জলাশয়গুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পাট চাষ ফিরিয়ে আনতে হলে জলাশয় খনন ও দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন চাষীরা।
শৈলকুপা উপজেলার কাতলাগাড়ি গ্রামের কৃষক সামছুল ইসলাম জানান, গত বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। চাষের খরচ বেশি ও বিক্রি করে ভালো দাম না পাওয়ায় এ বছর ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। খরায় খালে-বিলে পানি না থাকায় পাট পচাতে অনেক কষ্ট করতে হয়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের চাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, দিন দিন সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরির দাম বৃদ্ধিতে আশানুরূপ পাট চাষে লাভ হচ্ছে না। এছাড়া, রয়েছে পাট পঁচানোর জায়গার স্বল্পতা। তাছাড়া সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ না করায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষীদের।
কালীগঞ্জ উপজেলার উল্ল্যা গ্রামের পাটচাষী হারুনুর রশিদ জানান, গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছিলেন। এবার ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। পাটের তুলনায় অন্য সবজি চাষে লাভ বেশি হচ্ছে। এজন্য পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। খালে-বিলে পানি না থাকায় সেচযন্ত্র দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে পাট পচাতে হচ্ছে। এজন্য খরচও বেড়ে গেছে।
পাট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, পাটের বাজার এক এক সময় এক এক রকম থাকে। সরকারি মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেসরকারি মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম নির্ধারণ করে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে। তাছাড়া পাট চাষীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে দিনের পর দিন চাষীরা আগ্রহ হারাচ্ছে পাট চাষে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর পাটের দাম খুবই কম ছিল। এ বছর পাটের দাম বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছি।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, শিলাবৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে পাটের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পাট পচাতে বেগ পেতে হচ্ছে চাষীদের। এজন্য চাষীরা অন্য চাষে ঝুঁকছেন। এরপরও কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়াতে নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।