হোম বাংলাদেশ কার ‘স্বার্থে’ বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়?

কার ‘স্বার্থে’ বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়?

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ঘিরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় শিক্ষকদের, কর্মকর্তাদের কিংবা কর্মচারীদের। তাই শিক্ষার্থীদের ‘স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট’ বিষয়গুলোকে সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আসছে। আর সেটাই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ‘মূলনীতি’।

কিন্তু আমাদের দেশে ঘটনা কিছুটা উল্টো। এখানে ‘সাধারণ’ শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বাইরে ‘রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন’ অক্ষগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই যেমন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে শোবার জায়গা না পেলেও ‘রাজনৈতিক নেতারা’ একাধিক আসন আবাসিক হলগুলোয় দখল করে থাকে, বহিরাগতদের জায়গা দেয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে ফেলা শিক্ষার্থীদের দিনের পর দিন আবাসিক হলগুলোয় রাখতে কোনো অসুবিধা হয় না।

আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন মাঝেমধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকত মূলত ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে। বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল বন্ধের ঘোষণা আসত সিন্ডিকেটের জরুরি সভা থেকে। অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণক্ষয়, ছাত্রবিক্ষোভ, সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য কৌশল অবলম্বন করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ’ করে আসছে।

শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ‘স্বার্থের’ বনিবনা না হলে দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকে, যার কারণে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের মিছিল কিছুটা হলেও দীর্ঘায়িত হয়।

এই ধারার সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলোর একক আধিপত্যের কারণে প্রতিপক্ষ শিবিরের উত্তাপ কিংবা সংঘর্ষের ঘটনা হাতে গোনার মতো হয়ে গেছে।

তবে এই তালিকায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যেই বিপক্ষ, উপলক্ষ কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সঙ্গেই ঝক্কি-ঝামেলায় পোহাতে হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া আর যা-ই হোক, শিক্ষকদের দাবিদাওয়া আদায়কে কেন্দ্র করে ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ মাসখানেক ধরে বন্ধ আছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর দেখলাম। এই বন্ধের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেড় যুগ পার করে উনিশে পা দিয়েছে।

আমি নিশ্চিত নই, এই ১৯ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি এভাবে বন্ধ ছিল কি না, তবে গত দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে মূলত শিক্ষকদের ‘দ্বন্দ্বের’ কারণে এই কথা বলতে পারি। কী অদ্ভুত ঘটনা তাই না?

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও উপাচার্যের ক্ষমতার বলি কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ রেখে ‘উপাচার্যের’ ক্ষমতাচর্চার এমন নজির সত্যিই বিরল। যে শিক্ষকেরা ‘শিক্ষার্থীদের নীতিনৈতিকতা’ শেখাবে, তাঁরাই কি না মারামারি-হাঙ্গামায় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দিল! কিন্তু কেন এমন হবে? কী পরিস্থিতির অবতারণা হয়েছিল, যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে তাঁদেরই শিক্ষকদের সংগঠনের নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কিছু দাবিও পেশ করে, যেখানে উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির অভিযোগ তুলে থানায় যায় দুই পক্ষ। এ পরিস্থিতিতে মার্চে সপ্তাহব্যাপী ক্লাস বর্জন করে। ঈদ ছুটির পর ২১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সপ্তাহখানেক পর ৩০ এপ্রিল উপাচার্য জরুরি সিন্ডিকেট আহ্বান করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে দেয়। আর এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি এই লেখা পর্যন্ত (মে ৩০) বন্ধ।

New Era IT Village